নামে-বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদ! তিনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডেপুটেশন) ও ময়মনসিংহে কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক এ.কে. শামছ্উদ্দিন আহাম্মদ নান্নু।
শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়ে সওজ প্রকৌশলী শামছ্উদ্দিনের
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৭-০৭-২০২৫ ০১:২১:১৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
১৭-০৭-২০২৫ ০১:২১:১৮ পূর্বাহ্ন
সওজ প্রকৌশলী শামছ্উদ্দিনের
নিজস্ব প্রতিবেদক
শামছ্উদ্দিনের “আলাদিনের চেরাগ, শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়ে সওজ প্রকৌশলী
একজন সাধারণ সরকারি প্রকৌশলী, যিনি মাত্র ২০ বছর আগেও ছিলেন সীমিত আয়ের চাকুরে — আজ তার নামে-বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদ! তিনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডেপুটেশন) ও ময়মনসিংহে কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক এ.কে. শামছ্উদ্দিন আহাম্মদ নান্নু।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের সময় এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগে উত্তাল দেশের প্রকৌশল মহল। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে শুরু করেছে অনুসন্ধান। অভিযোগ — ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাৎ, নকশা পরিবর্তনের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের লাভবান করা, অর্থপাচার ও পরিবার-পরিজনের নামে বিপুল সম্পদ অর্জন।
“ময়মনসিংহ কেওয়াটখালী সেতু” প্রকল্পে নকশা পরিবর্তন করে জমি অধিগ্রহণের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন শামছ্উদ্দিন। প্রকল্প অনুমোদনের পর একনেকের নির্দেশ উপেক্ষা করে তিনি গোপনে নকশা বদল করেন। এতে মোটা অঙ্কের টাকা যায় ঠিকাদার সিন্ডিকেটের পকেটে।
এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হলেও একটি প্রভাবশালী মহলকে ব্যবহার করে তিনি অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত প্রকল্পের অনুমোদিত নকশার বাইরে সব কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশ দেন।
শামছ্উদ্দিন আহম্মদ ও তার পরিবারের নামে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল সম্পদ। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি:
ধানমন্ডি ৫ নম্বর রোডে ওরিয়েন্টাল হারমনি হোল্ডিংয়ে ২৬০০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট, ধানমন্ডি ৯/এ এবং পশ্চিম ধানমন্ডির মধুবাজারে আরও দুটি ফ্ল্যাট, চন্দ্রিমা উদ্যানে মনোয়ারা বেগম (স্ত্রী)-এর নামে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি, মোহাম্মদপুরে ছয়তলা বাড়ি, বরিশালের নিউ সার্কুলার রোডে ৫৪ শতক জমিতে দোতলা বাড়ি ‘নেহার ভবন’
এছাড়া স্ত্রীর নামে রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৭-৬৭২৬), বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর ও বিপুল অর্থ।
প্রকৌশলী শামছ্উদ্দিনের সরকারি বেতন দিয়ে এসব সম্পদ অর্জনের ব্যাখ্যা মিলছে না। তার বড় মেয়ে আমেরিকায় পড়ালেখার জন্য খরচ করেছেন প্রায় এক কোটি টাকা। ছোট মেয়ে পড়ছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে, সেখানে প্রতি মাসে লাখ টাকার বেশি খরচ।
একইসঙ্গে বছরে একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকা সফরসহ পারিবারিক জীবনযাত্রা অভিজাত শ্রেণির মতো। ছোট বোন ফজিলত আহমেদ মুন্নি, প্রাইম ব্যাংকের কর্মী, গোপনে শামছ্উদ্দিনের টাকার ব্যবস্থাপনা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সূত্রে জানা গেছে, তার আর্থিক লেনদেনের উপর কড়া নজরদারি চলছে।
২০০৫-২০০৮ সালে ঝালকাঠি সওজে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী থাকাকালে শামছ্উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে সে মামলা ম্যানেজ করেন।
সাধারণ মানুষের রক্তঘামের টাকায় প্রকল্প বরাদ্দ হলেও তা আজ দুর্নীতির ফাঁদে। শামছ্উদ্দিনের বাড়ির কেয়ারটেকারদের ভাষায়, “স্যার কোটি কোটি টাকার মালিক। মোহাম্মদপুরে তার একাধিক বাড়ি, ধানমন্ডিতে একাধিক ফ্ল্যাট।”
সওজের প্রকৌশলী (প্রশাসন) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “দুর্নীতিবাজ যেই হোক, সে দেশের শত্রু। অভিযোগ পেয়েছি। প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দুদক সূত্র জানিয়েছে, শামছ্উদ্দিনের বিষয়ে এর আগেও একাধিকবার অভিযোগ এসেছে এবং এবারও একটি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
তার প্রতিক্রিয়া জানতে একাধিকবার ফোন করা ও খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সরকারি চাকরির আড়ালে গড়ে ওঠা এক “চেরাগের জাদুকর” প্রকৌশলী শামছ্উদ্দিন। এ ঘটনায় শুধু একটি ব্যক্তির নয়, পুরো ব্যবস্থার দুর্নীতির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই অভিযোগের সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে সরকারের দুর্নীতি দমন প্রচেষ্টা প্রশ্নের মুখে পড়বে — এবং জনগণের আস্থা আরও ভেঙে পড়বে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload
কমেন্ট বক্স